ভালবাসার গল্পে আপনাকে স্বাগতম,ভালবাসার গল্পে আপনাকে স্বাগতম,ভালবাসার গল্পে আপনাকে স্বাগতম,ভালবাসার গল্পে আপনাকে স্বাগতম,ভালবাসার গল্পে আপনাকে স্বাগতম

2016-11-13 ~ ভালবাসার গল্প

Friday, November 18, 2016


                                      মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়ের ভালোবাসা 

Boy In Rain - Valobasa

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেগুলা হুট করে কোন মেয়েকে বলতে পারেনা ভালোবাসি।
কারন ওরা নিজেদের নিয়ে একধরনের হীনমন্যতায় ভোগে।
ওদের মনে সবসময় একটা ভীতি কাজ করে, ওর সামাজিক অবস্থান জানার পর মেয়েটি যদি ওকে ফিরিয়ে দেয়।
মেয়েটা যদি ছেলেটার প্রস্তাবে সাড়া দেয় তবুও দুশ্চিন্তার শেষ নেই!
একটা সম্পর্কে জড়ানোর চেয়ে সে সম্পর্কটা টেনে নেয়ার কাজটা বরং বেশি কঠিন।
মেয়েটার সাথে নিয়মিত ফোনে কথা বলা। কোন উতসবে দুজনে মিলে ঘুরতে বের হওয়া।ভালো কোথাও খেতে যাওয়া কিংবা জন্মদিনে টুকটাক কিছু গিফট করার কথা মাথায় আসলে চোখেমুখে অন্ধকার দেখে ছেলেটা। 
এই চিন্তা থেকে অনেক ছেলেই কোন মেয়েকে তার ভালোবাসার কথা কোনদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনা। 
এ সবকিছুর পরও অনেক ছেলে সাহস করে মেয়েটাকে ভালোবাসি বলে ফেলে।
মেয়েটাও একসময় ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই রাজি হয়ে যায়। 
ছেলেটা তখন থেকে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে। 
স্বপ্ন দেখে খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে মেয়েটাকে বিয়ে করে সুখের সংসার বুনবে।
মেয়েটা কলেজের সেকেন্ড কিংবা থার্ড ইয়ারে উঠতেই বাড়ীতে বিয়ের প্রস্তাবের হিড়িক পড়ে যায়।
মেয়েটা গভীর রাতে দিশেহারার মত ছেলেটাকে ফোন করে অসহায়ের মত চোখের জল ফেলে আর ছেলেটা পাথরের মূর্তির মত মন দিয়ে সব কথা শোনে এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
আর মধ্যবিত্ত হয়ে জন্ম নেয়ার জন্য মনে মনে নিজেকে অভিশাপ দেয়।
একসময় ওরা দুজন নিয়তিকে মেনে নেয়। 
ওরা কেউ কাউকে দোষ দেয়না।
যেন ওদের ভাগ্যে এমনটাই হবার কথা ছিল।
সারাজীবন হয়ত একটা অপূর্নতা বয়ে বেড়াতে হবে এটাই যা আফসোস। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের সবচেয়ে বড় গুন ওরা অনানুষিক কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়।
যেদিন বাড়িতে ছেলেপক্ষ মেয়েটাকে দেখতে আসে মেয়েটা তখন বুকে পাথর রেখে শাড়ি পরে মাথা নিচু করে ওদের সামনে গিয়ে বসে।
মেয়েটার বুকের মাঝে যে রক্তক্ষরন হয় সেটা কেউ টের পায়না। 
একসময় মেয়েটার বিয়েও হয়ে যায়।
আবার চলতে থাকে কম্প্রোমাইজ, মেনে নেওয়ার খেলা।
থেমে থাকে না কিছুই.., মধ্যবিত্ত মানুষদের থামতে নেই।
                        একটু একটু ভাল লাগা... তারপর শুধুই ভালবাসা
কলেজের প্রথম বছর ছিল… পরিচয় হল… বন্ধুত্ব হলো… ভাল লাগলো… তারপর প্রেম নিবেদন…
তারপর শুধুই ভালবাসা| নাহ্! এত নিরামিষ ছিল না আমাদের গল্প| এত নিরামিষ হলে
হয়তো এভাবে সাতটা বছর পার করে দিতে পারতাম না দুজনে|



সেই সাত বছর আগের কথা… কিছুদিন হলো কলেজে ভর্তি হয়েছি| হঠাৎ অপরিচিত কারো একটা
ই-মেইল নজরে পরলো| খুব সহজ একটা ধাঁধা লেখা ছিল ই-মেইলে| সাথে একটা মোবাইল
নাম্বারো ছিল, আর লেখা ছিল যদি ধাঁধার উত্তর জানা থাকে তাহলে যেন সেই নাম্বারে
পাঠিয়ে দিই| ধাঁধার উত্তর লিখে পাঠিয়ে দিলাম আর জানতে চাইলাম তার পরিচয়, তবে ই-
মেইলের উত্তর ই-মেইলেই… মোবাইলে দিয়ে নিজের মোবাইল নাম্বারটা একটা অপরিচিত
মানুষকে দিয়ে বিপদে পরবো নাকি!!?? কিছুদিন পর আবিষ্কার করলাম ছেলেটা আমার
সেকশনেরই! কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কে সেই শাখামৃগ যে আমাকে এত
দুশ্চিন্তায় ফেলে দূরে বসে মজা নিচ্ছে!!?? পরে জানতে পারলাম যার দিকে কখোনো
চোখই পরেনি, যার নামটাও কখোনো জানা হয়ে ওঠেনি ছেলেটা সেই… সানিয়াত… সানিয়াত
মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন|


বন্ধুত্ব হলো… খুব ভাল বন্ধুত্ব হলো… রাতে মোবাইলে কথা না বললে চলতোই না… ধীরে
ধীরে কখোন যে বন্ধুত্বটা দুর্বলতা হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না! হয়তো নিজেকে বা
ওকে বুঝতে দিতে চাইতাম না অনুভূতিটা| ভয় হতো… যদি বন্ধুত্বটাই হারিয়ে ফেলি!?
তবু মনের মাঝে কোন এক কোণায় হালকা ব্যথা অনুভূত হতো, যখোন ও ঐ সেকশনেরই সবচেয়ে
সুন্দর মেয়েটার কথা বলতো| হালকা ব্যথা বললে বোধহয় ভুল হবে… আগুনের একটু আঁচ
লাগলেই যেমন জ্বলা শুরু করে… আমারো তখোন ভেতরটা জ্বলতো! একটা কথা আছে না… “বুক
ফাটে তাও মুখ ফোটেনা”… ঠিক ঐ রকম!


জানুয়ারী ২০০৫ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫… আমাদের বন্ধুত্ব আরো গাড়ো হলো… আমাদের ছোট
খাট পছন্দ অপছন্দ শেয়ার করা হলো| যদিও আমাদের ক্লাসমেটদের ধারণা আমরা তখোন
থেকেই প্রেম করি| ধারণাটা আরো গাড়ো হয়েছিল যখন ও ক্লাসের একটা ছেলেকে আমাকে
উত্তক্ত করার জন্য ঝাড়ি দিয়েছিল| ধারণাটা নি্শ্চিত সন্দেহের রূপ নেয় যখন আমি ওর
হাতে কলেজের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটা চিঠি ধরিয়ে দিই| চিঠিতে কি লিখেছিলাম মনে
নেই, তবে সেটা কোনো প্রেমপত্র ছিল না এটা নিশ্চিত… সেটা ছিল ওর ওপর আমার
অভিমানের বহিঃপ্র্রকাশ মাত্র| ও আমাকে এখন প্রায়ই বলে চিঠিতে নাকি অসংখ্য বার
আমি লিখছলাম “আমি তোমার খুব ভাল Friend হিসেবে বলছি…”| সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো...
চিঠিটা ওর পকেটে ছিল... বৃষ্টিতে আমার চিঠিটা নাকি ভিজে একাকার|তার কিছুদিন পর
আমি আমার ২য় বর্ষে কলেজ বদলিয়ে ফেললাম| ফিরে গেলাম আমার স্কুলেরই কলেজ শাখায়|
তারপর আমার মোবাইল হারিয়ে গেল… সাথে ওর নাম্বারটাও| সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ|
মাঝেমাঝে ই-মেইল Check করতাম… যদি ও কিছু পাঠায়… কিন্তু দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই
পেতাম না| নিজেকে সান্তনা দিতাম… এই বুঝি ভাল হলো… Out of sight, out of mind!


পর্ব : ২



জানুয়ারী ২০০৬ থেকে ২০০৬ ডিসেম্বর… এর মাঝে অনেক উত্থান পতন হয়েছে দুজনেরই…
এসেছে কিছু পরিবর্তন… ৪ বছর বয়স বেড়েছে… কলেজ শেষ হয়েছে… ২০০৭ এর জানুয়ারী থেকে
আমি মেডিকেল ছাত্রী হয়েছি আর ও হয়েছে ইঞ্জিনীয়ার ছাত্র| তখনো মাঝেমাঝে ই-মেইলCheck
করতাম… হঠাৎ ২৯ জানুয়ারী ২০০৭ একটা ই-মেইল নজরে পরলো… from Md. Sarwer
Hossain| আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না| ই-মেইলটা ওর নতুন Address থেকে
পাঠিয়েছিল ওর Contact list এর সবাইকে| আমি আর সবাই এক হলাম!? এই ভেবে আর Reply
করা হলোনা| তারপর ২১ ফেব্রুয়ারী ২০০৭ আরেকটা ই-মেইল এলো| ই-মেইল পড়ে প্রথমে খুব
রাগ হলো… কারণ as usual সেখানে আমাকে Jealous করানোর মত কথা লেখা ছিল| ই-মেইলের
শেষ লাইন গুলো ছিল এরকম “SunSi dr ri porteSo khubi valo. amr amma Sune khub
khuSi hoiSe. kau dr hoiSe Sunle amma khuSi hoya jay, amder aaSe paSe Sob to
enginr tai. ajk to monehoy tmr bondo. ok valo thako.... bye… connection
raikho amak vuila gaSo ? ? ! ? ! ! ! ?” তখন কেন জানি আর রাগ করে থাকতে পারলাম
না… reply একটা করেই দিলাম| তারপর আবার শুরু হলো যোগাযোগ| ও যেমন আমাকে প্রায়ইJealous
করানোর মত কথা বলতো আমিও ওকে সব সময় Jealous করার চেষ্টা করতাম… কিন্তু ওর কোনো
প্রতিক্রীয়াই ছিলনা! খুব রাগ হতো আমার!



২০০৮ এর ১৩ ফেব্রুয়ারী… আমি ওকে “Yahoo!” তে Chat-এ বেশ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“আচ্ছা, তোমার কাল কি কোনো Programme আছে?” ও বললো, “নাহ্, কাল কি Programme
থাকবে? কেন থাকবে?” আমি বললাম, “তাহলে আমরা কি কাল TSC-তে দেখা করতে পারি?” আমি
ভেবেছিলাম ও “না” বলবে| কিন্তু ও বললো “হ্যাঁ”!! বলে আমার বিপদ বাড়িয়ে দিল|
প্রচন্ড রকমের ভয় ভর করলো মাথায়| এতই ভয় আর উত্তেজনা পেয়ে বসলো আমায় যে আমার
হারিয়ে যাওয়া মোবাইলের সাথে যে ওর মোবাইল নাম্বারটাও যে হারিয়ে গিয়েছে সেটাও
ভুলে গিয়েছিলাম| আর হঠাৎ করে ওর নাম্বারটাও কিছুতেই মনে পড়ছিল না| কিন্তু
ততক্ষনে আমরা Sign out করে ফেলেছি| হঠাৎ মনে পরলো একটা ডায়রীতে ওর নাম্বার লিখে
রেখেছিলাম, কিন্তু কোনো লাভ হলোনা… ডায়রীটা খুঁজে পেলাম না| তাই ১৪ ফেব্রুয়ারী
২০০৮ TSC যাওয়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বইমেলার মানুষের ভীরে আমরা দুজন দুজনকে
খুঁজে পেলাম না| পরদিন “Yahoo!” তে ও আমাকে নাম্বার দিল… ঠিক হল ১৭ ফেব্রুয়ারী
দেখা করবো| আবারো সেই ভয় আর উত্তেজনা পেয়ে বসলো আমায়|



১৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৮… তখন আমি হোস্টেলে থাকতাম| TSC গেলাম… একমাস ব্যাপি বইমেলা…
প্রচন্ড মানুষের ভীর| আমি পৌঁছেই ওকে ফোন দিলাম… ও কাছেই কোথাও ছিল… ৫ মিনিট
অপেক্ষা করতে বললো| এই ৫ মিনিটে আমার ভয় ক্রমোশ বেরেই চললো| মাথায় কত চিন্তা ভর
করলো! এই প্রথম আমি আর ও কোথাও এভাবে দেখা করতে যাচ্ছি… কতদিন পর দেখবো ওকে… ২
বছরের বেশি… ও কি পাল্টে গেছে… নাকি সেই আগের মতই আছে… ওকে চিনতে পারবো তো বা ও
আমাকে চিনতে পারবে তো!? এরকম কত ভয়…! তারপর অতি প্রতিক্ষীত ৫ মিনিট শেষ হলো…
দূর থেকে দেখেই চিনতে পারলাম ওকে| নাহ্! খুব বেশি পাল্টায়নি ও… তবে একটু মোটা
হয়েছে… মোটা বললেও ভুল হবে… স্বাস্থ্যটা একটু ভাল হয়েছে| ও কাছে এলো… আসার পর
আমি কিছুতেই ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না| ভয় অথবা লজ্জা… কিছু একটা কাজ করছিল|
লজ্জা পাচ্ছিলাম হয়তো লজ্জা নারীর ভূষণ বলে, আর ভয়… কারণ… ও যদি বুঝে ফেলে আমার
দুর্বলতা! সন্ধ্যা ৭.৩০ টা পর্যন্ত ছিলাম ওর সাথে| ও ওর স্বভাব সুলভ খুব নরমাল
আচরণ করছিল, আর আমি খুব চেষ্টা করছিলাম নরমাল হওয়ার… কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা! ও
আমাকে রিকশায় করে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে গেল| হোস্টেলে ফেরার পর থেকে শুধু মনে
হচ্ছিল ও কিছু বুঝলো না তো!!?? সত্যিই তাই… ও সেদিন বুঝে গিয়েছিল… কিন্তু ও
আমাকে বুঝতেই দেয়নি যে ও বুঝতে পেরেছে|






একদিন কথায় কথায় মনে পড়লো আমি ওকে কলেজে থাকতে জোড়া ডলফিনের একটা শো-পিস Gift
করেছিলাম| লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম… কি নির্লজ্জ মেয়েরে বাবা আমি! ও বললো ওটা নাকি
তখনি ওর Friend দের বিশেষ কৌতুহলের কারণে দুই টুকরা হয়ে গিয়েছিল| সাথে সাথে
আমার মনটাও দুই টুকরা হয়ে গেল| তারপর ও বললো সেটা নাকি ও আঠা দিয়ে জোড়া
লাগিয়েছে… তখন থেকে সেটা ওর Aquarium এ শোভা পাচ্ছে| এই কথা শোনার পর আমার মন
তো জোড়া লাগলোই… মনে হলো কোথা থেকে যেন হালকা একটা হাওয়া স্বজোরে একটা দোলা
দিয়ে গেল| মনে হলো… তাহলে কি ওর ও মাঝে দুর্বলতাটা কাজ করে!!?? তারপর থেকে আবার
শুরু হলো আমার “Mission : Making Him Jealous”| এবার বোধহয় কাজ হলো…



৩০ জুন ২০০৮… নাহ্! ১ জুলাই ২০০৮… ৩০ জুন ২০০৮ রাত ১২টার পর… সকালেই আমারAnatomy Prof Written exam|
ও আমাকে চমকে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “অনু, তুমি কি কোনো কারণে আমার প্রতি Weak?”
যার সত্যিকার অর্থে মানে ছিল, “অনু, তুমি কি আমাকে ভালবাসো?” আমি কি উত্তর দিবো
ভেবে পাচ্ছিলাম… আমার কি বলা উচিত যে আমি শুরু থেকেই Weak!!?? আমি বললাম… “কি
হবে জেনে? তোমার কাছে আমার সব Problem এর Solution  আছে, কিন্তু এই উত্তরের
কোনো Solution নেই”| ও বললো… “বলেই দেখো… থাকতেও তো পারে”| আমি বললাম… “হ্যাঁ,
আছে তোমার কাছে কোনো Solution?” ও বললো… “এভাবেই চলতে থাকি… কপালে থাকলে হবে”|
নিজেকে খুব ছোট মনে হলো… মনে হলো “হে ধরণী! তুমি দ্বিধা হও, আমি তোমার ভেতর
প্রবেশ করি”!


পর্ব : ৩



ভাবলাম এবার বুঝি বন্ধুত্বটাও হারালাম! ভাবলাম আমার ধারণা বোধহয় ভুল ছিল|
কিন্তু না কিছুই শেষ হয়নি| ও খুব সহজেই যেকোনো ব্যপার সহজ করে ফেলতে পারে| আমরা
আবার আমাদের চিরাচরিত Friendship-টাকেই ধরে রাখলাম|

২০ অগাস্ট ২০০৮… পরীক্ষা শেষে বাসায় আসলাম| ঐদিন রাতেও ১২টার পর ফোনে কথা হলো|
হঠাৎ ও আমাকে বললো, “আচ্ছা অনু, ঐ যে ঐ টা একটু বলোতো”| আমি বললাম, “কি বলবো?”
ও বললো, “ঐ যে তুমি যেটা Feel করো… ঐ যে কি যেন বলে না একজন আরেকজন কে”| আমার
বুঝতে বাকি রইলো না যে ও আমাকে দিয়ে কি বলাতে চায়! ওর মুখে আমার নামের উচ্চারণ
শুনলেই তো আমার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়… আমি  সেখানে একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে ওকে
এই কথাটা বলি!? আমি অনেক “না না” করলাম পর… অনেক ঢং করলাম …ও আমাকে বললো, “বলো
না একটু শুনি, দেখি কেমন লাগে!?” সব লজ্জার ডোর ছিড়ে বলেই ফেললাম… “I love
you”… এত speed এ বলেছিলাম যে নিজেই বুঝতে পারিনি যে ও বুঝলো কিনা! বলেই ওকে
কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম| সেই রাত অনেক লম্বা ছিল… ঘুম-ই আসলোনা
!



২৩ অগাস্ট ২০০৮… রাত ১২টার বেশি বাজে… অর্থাৎ ২৪ অগাস্ট ২০০৮… খুব ভয়ে ভয়ে
লজ্জায় লজ্জায় ওর ফোন ধরলাম| আবারো ও শুনতে চাইলো… এবারো অনেক ঢং করার পর বললাম…
এবার ও শুনতে চাইলো পর পর তিনবার… আমিও লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলে দিলাম| মনের
ভেতরটায় অদ্ভূত একটা ব্যথা অনুভব করলাম এই মনে করে যে “তুমি কি একবারও বলবা না?”
আমি যখন এই চিন্তায় মগ্ন তখন আচমকা কানে বেজে উঠলো ওর কণ্ঠস্বর… “অনু, তুমি
আমাকে মারবা!” জানিনা কোথ্থেকে এক ফোঁটা অশ্রু চোখের কোণে আশ্রয় নিল| ভাবলাম…
তাহলে কি ফুরালো আমার তিন বছর ছয় মাসের অপেক্ষার প্রহর? আমি যখন আবারো ভাবনায়
মগ্ন তখন আবার আচমকা কানে বেজে উঠলো ওর কণ্ঠস্বর… “ANU, I LOVE
YOU”…………………………………… মনে হলো আমার কর্ণ কপাট ভেদ করে সুমধুর সুর প্রবেশ করলো|
মনে হলো কেউ আমায় প্রেমের অমৃত সুধা গলধিকরণ করালো| আর সেই কেউ… আমার সানিয়াত
মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন|


এখন ও আমাকে মাঝে মাঝে বলে, “তখনই (কলেজে পড়ার সময়) তোমার weakness টা সামনে
আনতা, তাহলে আর এতদিন একা থাকতে হতো না… অবশ্য আমারই দোষ… আমি তখনই লাই দিলে
তখনই এটা সামনে আসতো|” ওকে jealous feel করানোর কথা উঠলে বলে, “আমি তো জানতাম
তুমি কি চাইতা... আর জানতাম বলেই jealous হতাম না আর তুমি আরো বেশি জ্বলতা… খুব
মজা লাগতো!” ফাজিল কোথাকার!


তারপর কত ঝড় ঝাপটা গেল… দুজনের পরিবারে জানাজানি হলো| ওর মা-বাবা খুব সহজেই
মেনে নিলেন| আর আমার মা-বাবা ছিলেন প্রচন্ড প্রেম বিরোধী ছিলেন| কিন্তু আমরা
কোনোভাবেই হাল ছাড়িনি| আমরা জানতাম, আমার বাবা আমাকে প্রচন্ড ভালবাসেন… তাই
তিনি অপরিচিত একজনের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে ভয় পাচ্ছিলেন| মা-বাবা ওর সাথে দেখা
করলেন… কথা বললেন… Impressed হলেন|


তারপর আর কি! তারপর…. এক সাথে পথ চলা… মাঝে মাঝে একটু একটু ভালবাসার ঝগড়া…
তারচেয়েও অনেক অনেক বেশি… সবকিছুর ঊর্ধে শুধুই আমাদের ভালবাসা|



ভালবাসার গল্প


বাইরের দিকে তাকিয়ে অনবরত পা নাচাচ্ছে মাইশা। তার পা নাচানোর কারণে টেবিলের উপর রাখা গ্লাসের পানি কাঁপছে, আর তা দেখে অমিতের কলিজাটাও কাঁপছে। মাইশার রিক্টারস্কেলে ১০ মাত্রার এমন কাঁপন দেখে তার ভাবি পায়ে চিমটি কাটে। 
-আউচ! ভাবি লাগছে তো।
-পা নাচাচ্ছিস কেন? দেখ ছেলেটা কিভাবে তাকিয়ে আছে।
-এটা আমার অভ্যাস। জানো না মনে হয়! ছেলেকে বাইরে তাকাতে বল।
কথা গুলো ফিশফিসিয়ে বললেও মাইশার ইচ্ছে করছে জোরে চেচিয়ে চেচিয়ে বলতে, যাতে ছেলেটা ভেগে যায়। কিন্তু সে পারছে না। দাদি বলেছে বিয়ের কনেদের আসতে কথা বলতে হয়, লাজুক ভাব নিতে হয়। কিন্তু লাজুক ভাবতো দুরের কথা মাইশা পুরো রাগি ভাব নিয়ে বসে আছে। অমিতের দিকে এই প্রথম তাকাল মাইশা।
"সে কি! ছেলেটা স্পাইক করে আসছে কেন! বাবাটা যে কি না! জানে আমি এমন গলা ছাঁটা মোরগ মার্কা ছেলে একদম পছন্দ করিনা। তবুও কিভাবে পারলো? নামের সাথে চেহারার কোন মিল নেই!" মনে মনে রাগে গরগর করতে থাকল মাইশা। মাইশা আর অমিতকে কথা বলতে দিয়ে মাইশার ভাবি সরে পরে।
অনেকক্ষণ নিস্তব্ধতা! টেবিলে রাখা চিকেন ফ্রাইটার দিকে একবার তাকাল মাইশা। তার খুব পছন্দের। কিন্তু আসার সময় দাদি এও বলে দিয়েছে "বিয়ের কনেদের বরের সামনে খেতে নেই। তোকে সাধলেও খাবি না" "উফ! দাদিটা যে কি! সব কিছুতেই তার পুরনো খেয়াল। এখন সামনে বসা মোরগটাকেই সহ্য করতে হবে"
- কিছু বললেন?
চমকে উঠে মাইশা! "ছেলেটা কিছু শুনেনি তো!"
-নাহ বলিনি।
-তা আপনি কিসে পড়ছেন?
-বাইও ডাটা দেখেন নি?
-হ্যাঁ দেখেছি তো।
-তো জিজ্ঞেস করছেন যে?
-না আসলে কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আপনার কিছু জানার আছে?
-আছে?
-জি বলুন
-আপনার নামের সাথে আপনার চেহারার মিল নেই কেন?
-কি রকম?
-এই যেমন নামটা অমিত, আর চেহারা বলছে আমার নাম রকি!
-হাহাহাহা! তা অমিতদের চেহারা কেমন হতে হয়?
-অমিতদের চেহারা হঠাৎ বৃষ্টি ছবির ফেরদৌসের মত হয় কিংবা হুমায়ুন আহমেদের শুভ্রের মত হতে হয়।
-হাহাহা.......মজার তো!
-হুম আসলেই মজার
মাইশা আবার অন্যমনস্ক হয়ে যায়। তার জীবনটাই কেন যেন মজার হয়ে গেছে। এই যেমন তার বাবা-মা খুব মজা নিয়ে তাকে বিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে টেবিলে রাখা চিকেন ফ্রাইটার মত মনে হচ্ছে তার। সবাই মজা নিয়ে খাচ্ছে আর সে দেখছে।
আজ একটা বিরক্তিকর দিন গেছে মাইশার। অমিতকে পছন্দ না হলেও বাবাকে বলেছে হয়েছে। কেন বলেছে তাও জানে না। জানতে ইচ্ছেও করছে না তার, জানতে চাইলেই হয়তো অমিতকে মেনে নেওয়া কষ্ট হবে। মাইশার একটু নাক উঁচু স্বভাব আছে, জগতের কোন কিছুই যেন তার মত করে হয়না। এই যেমন তার দাম্ভিক প্রকৃতির মানুষ পছন্দ অথচ তার আশেপাশের মানুষগুলো সব কেমন জানি "দিলে বড় জ্বালা" প্রকৃতির। সে নিশ্চিত অমিত ছেলেটাও এমন হবে। ছেলেটার মধ্যে এখনো পিচ্চি পিচ্চি ভাব। সে হয়তো কখনও বুঝবে না প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আইসক্রিম খাওয়ার মজা, অমিত হয়তো বুঝবে না তপ্ত গরমে রবীন্দ্র সঙ্গীত মুহূর্তেই সময়টাকে শীতল করে দিতে পারে, হয়তো বুঝবে না বর্ষায় কোন একাকীত্ব নেই বরং হাজার হাজার বৃষ্টির ফোঁটা বন্ধু হয়ে থাকে তোমার অজান্তে, হয়তো......... মাইশার এসব ভাল লাগাকে সবাই উচ্চতর পর্যায়ের পাগলামি ভাবে। মাইশার খুব ইচ্ছে করে ছাদের রেলিং-এ পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে। কিন্তু একবার বসতে গিয়ে যা কেলেঙ্কারি হল। তার দাদি ভেবে বসে সে আত্মহত্যা করতে চেয়েছে। সেই থেকে সে আর বসে না। তার সব উদ্ভট ইচ্ছে গুলোর সাক্ষী হয়ে থাকে একটা ডায়েরী।
ডায়েরীটার দিকে তাকিয়ে সে প্রায়ই ভাবে "এই ডায়েরী ছাড়া হয়তো আর কেউ জন্মায়নি যে চোখের ইশারাতেই বুঝে নিবে সব কিছু। যাকে ভালবাসি বলে চাপিয়ে দেওয়া যাবে নিজের পাগলামি গুলো। ইশ! উপন্যাস পরে আমার মাথা গেছে। সেই বিশেষ মানুষটা যে উপন্যাসের নায়ক হতে হবে এমন তো কোথাও লিখা নেই" এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।
মোবাইলে কলের শব্দে ঘোর কাটে মাইশার।
-হ্যালো!
-কেমন আছেন?
-কে বলছেন?
-আমি স্বপ্ন [হাসি]
-কিন্তু আমি তো জেগে আছি।
-আমি কি ঘুমের স্বপ্নের কথা বলেছি?
-ও আপনার নাম স্বপ্ন? তাহলে আমি দুঃখিত। এই নামে কাউকে আমি চিনি না। রাখছি..........
-হ্যালো হ্যালো রাখবেন না প্লিজ। আমি অমিত।
-আমি জানতাম।
-কিভাবে?
-ভাবি আপনার নাম্বারটা মোবাইলে সেইভ করে দিয়েছিল
-তার মানে আপনি নিতে চান নি?
-মানে! ["এই ছেলে কিভাবে জানে এটা!"]
-মানে হল আমাদের মোবাইলে অন্য কেউ তখনি নাম্বার সেইভ করে দেয় যখন আমরা নাম্বারটা নিতে চাই না, তাই না?
-আপনি তো বড়ই চালাক মানুষ।
-জি ["বোকা বউ পেলে সব পুরুষই চালাক হয়"]
-এক্সকিউজ মি! বিড়বিড় করে কি বললেন?
-না কিছু না। রাখছি ভাল থাকবেন। বিয়েতে দাওয়াত রইল।
মনের অজান্তে হেসে দেয় মাইশা। নিজেকে এমন রূপে দেখে একটু অবাকই হল মাইশা।
এরই মধ্যে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে যায়। গায়ে হলুদের দিন। অমিত তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে। সাদা শাড়ি আর হলুদ পাড়ের একটা শাড়ি পরেছে। হলুদের সাঁজে নাকি মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগে। এতটা লাগবে অমিত জানতো না। অমিতের খুব গান গাইতে ইচ্ছে করছে, এটা তো আর সিনেমা না যে নায়ক প্রেমে পরল আর পরের দৃশ্যেই গান শুরু হয়ে যাবে। নাহ গানটা মাইশাকে একাই শুনাবে। যদিও হলুদের অনুষ্ঠানে গাওয়া যেত, কিন্তু এটা একটু বিশেষ গান।
গানের আসরের আয়োজন চলছে। মাইশা এক পাশে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। হঠাৎ একটা মায়াবী ভরাট কণ্ঠের গান মাইশার কানে ধাক্কা খেল।
"আমার ভেতর ও বাহিরে
অন্তরে অন্তরে আছ তুমি হৃদয় জুড়ে"
গায়কের দিকে তাকিয়ে মাইশা কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনি। অমিত তারই দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গান গাইছে। এই প্রথম মাইশা লজ্জা পেল। একদম আদর্শ নতুন বউয়ের লজ্জা। তার স্বপ্নের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে এই প্রথম ভাল লেগে উঠল। হয়তো তার প্রিয় গান গাওয়াতে, কিংবা অন্যকিছু। আপাতত এই "অন্যকিছুর" কোন নাম দেওয়া যায় না। বিয়েটা এত দ্রুত হয়ে গেল যে দুইজন দুইজনকে জানার সময়টা পেল না। বিয়ের ঝামেলায় কেউ কাউকে খেয়ালি করতে পারেনি এতদিন। বিয়ের দুইদিন পর। মাইশা, অমিত ও তার বোন গল্প করছে। কিছুক্ষন পর অমিতের ছোট বোন চিৎকার দিয়ে উঠে,
-ভাইয়া ভুমিকম্প!
-কই না তো।
-হ্যাঁ! বিছানা কেঁপে উঠল।
ততক্ষণে মাইশা পা নাচানো বন্ধ করে দিল। অমিত মাইশার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে বলছে, "হ্যাঁ রে। রিক্টারস্কেলে মে বি ১০ মাত্রা হবে"
মাইশা আড় চোখে অমিতের দিকে তাকাল। তার খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু দমে আছে। কয়েকদিন যেতে না যেতেই মাইশা লক্ষ্য করল অমিত তার খুব কেয়ার নিচ্ছে। নতুন পরিবেশে মাইশা যাতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে সেটা নিজ দায়িত্বে খেয়াল রাখছে। মাইশাকে ভাবিয়ে তুলে, "এই ছেলেটা এমন কিভাবে হতে পারে? আমি যেমন ভেবেছি তার বিপরীত।"
অনেকদিন পর ডায়েরীতে লিখতে বসে মাইশা। অমিত আসার পর এই প্রথম লিখা। "ছেলেটাকে আজকাল বড্ড বেশি ভাললাগে। একটু পিচ্চি তবুও। এই 'তবুও' র উপর নির্ভর করে কোথাও হারিয়ে যেতে পারলে মন্দ হত কি? হ্যাঁ, ও হয়তো চোখের ইশারায় সব বুঝবে না। আমি না হয় বুঝিয়ে দিব। চোখ দিয়ে যদি সব হত উপর আলা তো আর মুখ দিতেন না" লিখতে লিখতে সে খেয়াল করল সব কিছুতেই তার এই পিচ্চি বরটা চলে আসছে। আর লিখার সাহস পাচ্ছে না।
ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছে মাইশা। পেছনে অমিত এসে দাঁড়ালো।
-কি আমার কথা ভাবছ? হিহি
-না তো। তুমি কি ভাবার বিষয়?
-আমি স্বপ্নের বিষয় না হলেও ভাবার বিষয়। হিহি
-হাসি ছাড়া তুমি কথা বলতে পার না?
-নাহ একদম না। তুমি হাসো না বলে কি আমিও হাসব না? দুইজনই মুখ গোমরা করে রাখলে তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তার উপর কোন অঘটন ঘটলে দেনমোহর তো আমাকেই দিতে হবে তাই না? হিহি
মাইশাকে অমিত অবাক করেই চলেছে। হয়তো রুপকথার রাজপুত্রের মত নয়, ডায়েরির পাতায় লুকিয়ে থাকা সেই কেউ একজনের মত।
-মাইশা, তোমার নিশ্চয়ই এখন ছাদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসতে ইচ্ছে করছে?
এবার মাইশা আকাশ থেকে মাটিতে না পরে, মাটি থেকে যেন আকাশে উঠে পরেছে। কারণ মধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে আকাশে উঠাটাই সব চেয়ে অবাক করার মত কিছু।
- তুমি কিভাবে জানো?
-ম্যাজিক বুঝলে ম্যাজিক!
-তুমি কিছু লুকাচ্ছ!
অমিত পেছনে লুকিয়ে রাখা একটা জিনিস বের করল।
-আমার ডায়েরী! এটা কোথায় পেলে? আমাকে দিয়ে দাও।
-নাহ দিব না। একটা কলম ৫ টাকা বুঝলে? কলম নষ্ট করে ডায়েরিতে না লিখে আমাকে বলা যায় না?
-অমিত! আমার ডায়েরী দাও।
অমিত নিষ্পাপ চেহারায় ডায়েরী দিতে দিতে বলে, "আচ্ছা এই তবুওর উপর নির্ভর করে কোথাও না হারাও কিন্তু কিছুক্ষণ পাশে বসে থাকা যায় কি?"
-আমার সব উদ্ভট বায়নার ধারক হবে তো?
মাথা চুলকাতে চুলকাতে অমিত বলল, " আর যাই কর, ছাদের রেলিং এ বসতে বল না প্লিজ। হিহি"
-পিচ্চি!
খোলা ছাদে বসে আছে দুই জন, মেঘলা আকাশ আর?
আর সেই বাকি থাকা গানটা-
"বধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায় বিনা কারণে
নীল আকাশ থেকে একি বাজ এনেছে হায় বিনা কারণে
দিনে দিনে মূল্য বিনে
সে যে আমায় নিলো কিনে ।

Thursday, November 17, 2016

"কি ব্যাপার সকাল আটটা বাজে। আজ কি অফিসে যেতে হবে না নাকি?" - ঝুমের ডাকে চোখ ডলতে থাকে জীত।
জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেয়ার সাথে সাথেই সকালের আলোটা চোখে এসে পড়ে জীতের।
বিছানার পাশেই ভেজা চুল ঝাড়তে শুরু করে ঝুম। 
ভেজা চুলের ছাট এসে জীতের মুখে পড়ে। 
জীত ঝুমের হাতটা ধরে কাছে নিয়ে এসে কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বলে, "ভালোবাসি,ভালোবাসি, ভালোবাসি"
ঝুম ও জীতের নাকটা হালকা টেনে বলে, "ভালোবাসি,ভালোবাসি, ভালোবাসি"
এমনটা প্রতিদিনই হয়।
ভালোবাসা বাড়ে ধীরে ধীরে। কখনোই কমে না। 
ছ বছর হলো ঝুমের আর জীতের বিয়ে হয়েছে। 
এতটুকু পরিমান মন খারাপ করতে দেখেনি ঝুমকে। 
জীত এতেই খুশি। লাভ ম্যারিজ। দুজনকেই দুজন খুব সুন্দর করে বোঝে।
ঝুম কখনোই পুরো পৃথিবী দাবি করে না জীতের কাছে।
জীত ই তার জন্য যথেষ্ট। 
জীত ঝুমকে রাজকুমারী বলে ডাকে। 
ঝুমের খুব লজ্জা লাগে। আবার অনেক ভালোও লাগে।
জীত ঝুমকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। অফিসে যাওয়ার আগে ঝুম আমার রুমাল কই, ঝুম আমার মোবাইল কই,ঝুম আমার টাই কই,ঝুম আমার ফাইল কই, এইটা কই ওইটা কই নানা কথা বলে ঝুমকে অস্থির করে ফেলে। 
এমনকি টাইটাও নিজ হাতে বাধা শিখেনি কারন ঝুম বেধে দেবে বলে। 
বড্ড ক্লান্ত হয়ে যেত ঝুম। 
কিন্ত অফিসে যাওয়ার সময় যখন ঝুমের কপালে চুমু দিয়ে জীত বলে, 'সারাটাদিন তোমায় অনেক মিস করবো '
তখনই যেন ঝুমের ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে মুখে হাসি ফুটে ওঠে। 
পরম বিশ্বাসে মাথা এলিয়ে দেয় জীতের বুকে।
কিন্তু জীবনে সুখের পাশাপাশি দুঃখও আছে। 
জীত সবসময় তা লুকানোর চেষ্টা করে। 
ঝুম রোজ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদে। কিন্তু জীত ঝুমের শব্দ ছাড়া কান্না বুঝতে পারে। 
তখনই চোখের জল স্পর্শ করে ঝুমের অধর থেকে সরিয়ে দেয়। 
রাগ করে বলে, 'আবার কান্নাকাটি করলে আমি কিন্তু মরে যাবো ' এটা বলে জীতও কেঁদে দেয়। 
এভাবেই কষ্ট ঢেকে যায়। 
কিন্ত ঝুমের কষ্টটা যেন একটু বেশিই।
তিন বছর আগের ঘটনা। ছ মাসের অন্তঃস্বত্তা ঝুম। 
বেশ ভালোই চলছিল জীত আর ঝুমের দিনগুলো। 
পেটের ভেতর থাকা বাচ্চা টা পা দিয়ে ধাক্কা মারে আর ঝুম ব্যাথায় কাতরে ওঠে। এদিকে জীত হেসে হেসে প্রায় খুন।আর রেগে গিয়ে ঝুম বলত“ তোমার মতোই দুষ্টু হবে”।
কোনো এক দুপুরবেলা হঠাৎ বাথরুম থেকে চিৎকার এর আওয়াজ আসে। 
জীত বাথরুমের দরজা খুলে যেন চোখে মুখে অন্ধকার দেখা শুরু করলো।
বাথরুমের মেঝে রক্তে লাল হয়ে রয়েছে। 
আর ঝুম যন্ত্রনায় ছটফট করছে।
এরপরে ঘটনা স্বাভাবিক হতে পারতো।
কিন্তু ভাগ্যে হয়তো অস্বাভাবিক কিছু ছিল। 
প্রচন্ড আঘাতের কারনে মা হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ঝুম।
ঝুম শুধু কেঁদে যায় জীতের হাত ধরে আর জীত মিথ্যে শান্তনা দিতে থাকে।
"কাঁদছ কেন? 
ধুর পাগলি। ভগবান হয়তো আরো বড় উপহার রেখেছে আমাদের জন্য। কিচ্ছু হবে না।
কাঁদবে না তো। তাহলে কিন্ত আমি কেঁদে দেবো।"
মুহূর্তগুলো খুবই কষ্টকর।
এখনো ঝুম যখন বারান্দায় একা একা বসে থাকে তখন জীত পাশে গিয়ে বসে আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,
"ওই যে চাদটা দেখছো না? তার পাশের তারাটাই আমাদের বাচ্চা টা"
মনটা যেন আরো ভারী হয়ে যায় ঝুমের। ভারি মনটা আর ধরে রাখতে না পেরে জীতের বুকে এলিয়ে দেয়। 
আর জীত ঝুমের কপালে চুমু দিয়ে বলে, "ভালোবাসি,ভালোবাসি, ভালোবাসি" কী অদ্ভুত এই ভালবাসা তাই না।

একটি শীতের সকালের মিষ্টি প্রেম কাহেনী

মোঃমাহাতাব বিন মিন্টু

সকাল সকাল ক্লাসে যেতে কি মজা লাগে কারও।তবুও আবার শীতের কালে।শত কষ্ট হলেও যেতে হবে কেননা আজ ক্লাসে গুরুত্বপূর্ন একটা ক্লাস আছে।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেলাম। ৯ টা বাজে আজ কি রাস্তা ঘাটে লোকজন কম নাকি? বাস-স্ট্যান্ডে যেতেই দেখি বোরকা পরা এক রমনী দারিয়ে আছে।বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।মেয়েটার সাথে বার বার চোখ পরে যাচ্ছে।যাই হোক বাস এসে পরল উঠে পরলাম বাসে মেয়েটাও উঠল।কেন জানি মেয়েটাকে বার বার দেখতে মন চাচ্ছে।কিছুক্ষনের মধ্যে আমার গন্তব্য চলে এলাম।ক্লাসেও মন বসছে না এত একটা ইমপোর্টেন্ট একটা ক্লাসে মন বসাতে পারলাম না।বাসায় ফিরে আসলাম।রাতে শুধু মনে হচ্ছে কাল কি তার দেখা পাব?কি জানি ? এটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।সকালে এক ধীর বিশ্বাস নিয়ে বাস-স্ট্যান্ডে গেলাম।গিয়ে দেখি আজও সেই মেয়ে আজব তো মনের কথার সাথে দেখি মিলে গেছে।তাহলে কি আমার ঘন্টা বেজে গেছে?আজও তাকে দেখছি তবুও জানি কেন মনে হচ্ছে তাকে যদি সবসময় দেখতে পারতাম।ওর মুখটা কখনো দেখতে পারিনি শুধু চোখ ছাড়া।পরের দিন এর কথা বাস-স্ট্যান্ডে গেলাম দেখি ও নাই ওর জায়গায় বাংলার নায়িকাদের পেছনে ফেলবে মডেলিং এক কন্যা।দেখে মেজাজটা যে কি খারাপ লাগছে।যাই হোক কন্ট্রল করলাম।দেখি মেয়েটা আমার দিকে আসছে।আরে আমার কাছে আসছে কেন?
এই যে ভাইয়া একটু শুনবেন আপনি কোথায় যাবেন জানতে পারি?
আমি ভাবলাম হাইজাকার হতে পারে কেননা আজকাল মেয়েদের বিশ্বাস নেই।
আমি ভদ্রভাবেই বললাম বনানীতে যাব।
ও আচ্ছা আমিও তো যাব ভাইয়া ঐখানে আমার ক্লাসে ।
কি করেন আপনি মেয়েটা জিজ্ঞাসা করল আমাকে?
মেজাজটা যে আর কন্ট্রল করতে পারলাম না বলেই ফেললামশ আপনার কি আমার করা নিয়ে নিয়ে। আপনার সমস্যা কি?
দেখলাম মেয়েটা কেদেই দিল ।আর সেখান থেকে চলে গেল।
নিজের প্রতি খুব খারাপ লাগল।কি দরকার ছিল বকা দেওয়ার।
পরের দিন আবার মেয়ে দুটোকে খুজতে আসলাম।খুব খারাপ লাগল কাউ কে না পেয়ে ক্লাসে না গিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
প্রায় ১ মাস হয়ে গেল কারো দেখা পেতাম না
একদিন দেখি সেই বোরকা পরা মেয়েটি।আমার প্রেমের থামা ঘড়িতে মনে হয় কে জানি ১০০০ বোল্টের ব্যাটারি লাগিয়ে দিছে। কথা বলব কি না বলব এটা ভেবে একসময় 
সম্পন পড়তে এখানে ক্লিক করুন

জনপ্রিয় পোস্ট

জনপ্রিয় পোস্ট

সাম্প্রতিক পোস্ট

আমার ফেসবুক

http://facebook.com/sayed.arviapon

কিছু কথা

পেজ দেখা হয়ছে

আমার সম্পর্কে

ভালবাসার গল্পে আপনাকে স্বাগতম ভালবাসার গল্পে আপনাকে স্বাগতম